বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন শ্রীপুরে গৃহবধুকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা মামলাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে সাজানো নাটক বলে স্থানীয়রা অভিহিত করেছে।সরেজমিনে দেখা যায়,মেহেন্দিগঞ্জ থানায় স্বামী-ভাসুরের বিরুদ্ধে ধর্ষনে ব্যর্থ হয়ে হত্যার চেষ্টায় মারধরের অভিযোগ মামলা দায়ের করেছে।মেহেন্দিগঞ্জ থানার মামলা নং-১,১/৫/২০১৯ জিয়ার ৪৭/১৯।ধারাঃ-নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০(২০০৩)সংশোধনী ১০/৩০,৩২২,৩২৩,৩২৪,৩০৭ বাঃদঃবিঃ।ঘটনার তারিখ ও স্হান:-৩০/৪/২০১৯ বাদীনির স্বামী সুলতান হাওলাদারের বসত বাড়ির আঙ্গিনায়। মামলায় নামাল্লেখ্য ৯জন সহ ১৪জন আসামী করা হয়েছে।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন,বাহেরচর গ্রামের বাদীনির স্বামী সুলতান হাওলাদারের ও তার ভাই বাবুল হাওলাদার,গাগরিয়া গ্রামের মন্নান বয়াতির ছেলে সোহেল বয়াতি,মাইদুল বয়াতি,বাহেরচর গ্রামের জন্ম থেকে পঙ্গু(লেংড়া)শাজাহান শরীফ ও তার ছেলে গিয়াস শরীফ,বাহেরচর গ্রামের আঃ রশীদ কাজীর ছেলে আবু তালেব,গাগরিয়ার জাহাঙ্গীর মেম্বার,গাগরিয়া গ্রামের সিডু রাড়ীর ছেলে আনোয়ার রাড়ী সহ অজ্ঞাতনামা আরোও ৪/৫জন আসামী রয়েছে।
উল্লেখ্য গত সোমবার(২৯ এপ্রিল ২০১৯)গভীররাতে শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মেম্বার মোঃ নোমান মোল্লা ও আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহমুদুল হাসান বেপারীর বাড়ির সংলগ্ন ঘনবসতি এলাকায় গৃহবধু জাহানারাকে হাত-পা বেঁধে সিগারেটের আগুনে ছেঁকা দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে স্হানীয় পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে!
ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগ জাহানারার স্বামী সুলতান হাওলাদারের সঙ্গপাঙ্গরা পাশ্ববর্তী আলিমাবাদ ইউনিয়নের গাগরিয়ার গ্রামের ভাড়াটিয়া ক্যাডাররা ট্রলারযোগে শ্রীপুর পুলিশ ক্যাম্পের পেছনে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে গৃহবধু জাহানারাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
জাহানারার পিতা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান,সুলতান হাওলাদার দাঁড়িয়ে থেকে গিয়াস শরীফের,মাইদুল,সোহেল সহ বোকরা পরিহিত ১জন মোট ৫জন ঘটনার দিন রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে বুকের স্তন,মুখ জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।জাহানারাকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়ে ডাক-চিৎকার দিলে স্হানীয়রা উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করেছে।এঘটনায় মামলায় ৯জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি।তিনি আরও বলেন,সাবেক মেম্বার মাহমুদ বেপারীর নির্দেশেই তার একমাত্র ছেলে জাহাঙ্গীর ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়,তাদেরকেও আসামী করেছে।মামলার চার্জশিটে বাদ দেয়া হবে।এঘটনায় ডিজিটাল বিডিনিউজ ডটনেট পত্রিকায়
শ্রীপুরে গৃহবধুকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা-থানায় মামলা গ্রেফতার-১
শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
চরফেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা মামলা স্বাক্ষী ভিকটিমের মামা সবুজ মাতুব্বর জানায়,আমার ভাগ্নি জাহানারার ঘটনা পরে শুনেছি।আমার বাড়ি জাহানারার বাড়ির দূরত্ব হোন্ডা ভাড়া ৩০টাকা।প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে থাকি।
কাজী মোঃ লাভলু জানায়,আমরা ৪ভাই ঢাকায় থাকি।ঈদ ব্যতিত বাড়িতে যাওয়া সম্ভব নয়।আমার ঘরের পাশ্বে জাহানারার বাপের ঘর।তারপর জাহানারার স্বামী সুলতান হাওলাদারের ঘর।ওই ঘটনা সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।
সুলতান হাওলাদারের কলেজ পড়ূয়া সন্তান জাহিদ হাওলাদার(১৮)জানিয়েছে,আমার বাবার সঙ্গে দীর্ঘদিন ঝামেলা চলছে।যৌতুক বিরোধী আইনে মামলায় ডিগ্রি হওয়ায় পারিবারিক আদালতে সিআর ১৪/২০১৮ মামলায় মাসিক ৮হাজার টাকা খরচ না দিয়ে বাড়িঘর-জমি আবু কাজীর কাছে বিক্রি করার পায়তারা চালাচ্ছে।ঘটনার দিনরাতে আওয়ামীলীগের ক্যাডারদের নিয়ে মাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।
মোঃ শাহাজাদা কাজী জানায়,এই মামলায় ১০জন আসামী পুলিশ করেছে।গিয়াসকে পুলিশ না ধরলে শুধু সুলতান,সোহেল বয়াতি,আনোয়ার রাড়ী,লামিয়া আসামী থাকতেন।ঘটনার সময় ডাক-চিৎকার শুনে ঘর থেকে টর্জলাইট নিয়ে বাহির হলে সুলতান,সোহেল বয়াতিকে পালিয়ে দৌড়াতে দেখেছি।
বাহেরচর গ্রামের আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের বড়ভাই দিদারুল মোল্লা বলেন,ঘটনার পরেরদিন সকালে দেলোয়ার বেপারী আমার ঘরে আসেন।চেয়ারম্যান ফোন নাম্বার চাইলে ঘটনা জিজ্ঞাসা করে জানলাম,সোহেল,সুলতান,আনোয়ার,বাবুল জাহানারাকে সিগারেটের আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।আমার ফোন দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে ফোন দিয়ে তাঁকেও দেলোয়ার একই ঘটনা জানিয়েছে।তবে এখন দেখছি,চাঁদাবাজির ধান্দায় যাকে,তাকেঁ মামলা জড়াচ্ছেন।আবু কাজী সারারাত্র আমার সাথে ছিলেন।সেও মামলার ৭নং আসামী।এরকম ঘটনা করে ঘনবসতি এলাকার থেকে অভিযুক্তরা কিভাবে বের হয়ে গিয়াছে।পুলিশরা ও গ্রামবাসীরা একজনও আটক করতে পারিনি।বিষয়টি বড়ই অবাক লাগে!সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদঘটন করার প্রশাসনের কাছে অনুরোধ রইলো।
এব্যাপারে বাহেরচর গ্রামের মেম্বার নোমান মোল্লা সাংবাদিকদের জানায়,ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানিনা! পত্র-পত্রিকার প্রকাশিত সংবাদ পড়ে অবগত হয়েছি,আমাকেও নজরদারিতে রাখছে।মামলায় আসামী করার হুমকি দেন।সুষ্ঠু-নিরাপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির চাই।
আলিমাবাদ ইউনিয়নের সেচ্ছা সেবক লীগের নেতা মোঃ সোহেল বয়াতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,দেখুন ঘটনাস্হলে যেতে একটি নদী পার হতে হয়।পাগল ব্যতিত কেউ বিশ্বাস করবে না,গভীররাতে এক ইউনিয়ন থেকে অন্য ইউনিয়নে একাজ করতে পারে!আইনের শাসন অবশ্যই আছে।ঘটনাটি সাজানো নাটক।এটা মিথ্যা প্রমাণিত হবে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাহমুদুল বেপারী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানিয়েছে,দেলোয়ার বেপারী ঘটনার পরে রাতে এসে আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে,আমি শ্রীপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ মোবাইলে জানিয়েছি,পুলিশ ঘটনাস্হলে উপস্হিত হয়ে জাহানারাকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।এই ঘটনায় ৪জন সম্পৃক্ত জানিয়েছে ভিকটিমের ও তার মা শাহানুর বেগম।এখন দেখি,দুই ইউনিয়নের রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আসামী হচ্ছে।
শ্রীপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান মোঃ হারুন অর রশীদ মোল্লা বলেন,স্বামীর বাড়িঘরে থেকেও আসামী বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করে তাড়িয়ে দিয়েছে।বিয়ের আঠার বছর পর এই ধরনের অভিযোগ কতটা গ্রহণযোগ্য আইন-আদালতের কর্মকর্তা বলতে পারবেন।ঘটনার আশে-পাশে শতাধিক ঘর থাকলেও চরফেনুয়া বাসিন্দা এবং ঢাকায় চাকরী করেন।তারা কিভাবে স্বাক্ষী হয়েছে।সুলতানকে মাস্তান দিয়ে উপবন লঞ্চ তুলে নিয়ে জাহানারা বিয়ে বসেছে।দেড়যুগ পরে সুলতানের ভাত খাবেনা।বাড়ি-ঘর দখল নগদ ১০ লাখ টাকা দাবি করে।সুলতান শালিসী সম্মতিক্রমে ৩লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও মানতে নারাজ জাহানারার পরিবার।সিগারেটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা সঠিক তদন্ত হলেও প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
শ্রীপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ(এসআই) মোাঃ হুমায়ূন কবীর শুক্রবার জুমার খুতবার পূর্বে মসজিদের মিম্বরের সামনে দাড়িয়ে বলেন,এটি একটি বিছিন্ন ঘটনা!তদন্তে প্রকৃত ঘটনা রহস্য উদঘটন হবে।মাহমুদ বেপারী ফোনে জানালে,উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে পাঠাইয়াছি।
এব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মজিবর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,বাদীর লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্হা নেয়া হবে।
এবিষয়ে বরিশাল পুলিশ সুপার(এসপি) মোঃ সাইফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,সুষ্ঠু-সঠিক তদন্তপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির ব্যবস্হা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিস্তারিত আসছে——
Leave a Reply